‘সব ডেলিভারি চিকিৎসকের কাছে করাতে গিয়ে ম্যাসাকার করে ফেলছি। নরমাল ডেলিভারি একটি স্বাভাবিক দৈহিক বিষয়’।
‘একজন এফসিপিএস বা অন্য ডিগ্রিধারী চিকিৎসককে কেন গর্ভবতী নারীদের নরমাল ডেলিভারি করাতে হবে। তারা শুধু রেফার করা জটিল রোগীদের ডেলিভারি করাবে’।
‘এক সময় গ্রামে-গঞ্জে এক শ্রেণির নারীরা হাজার হাজার গর্ভবতীর নরমাল ডেলিভারি করাতো। আমাদের সময় সুশীলা নামে একজন মিডওয়াইফ সব নরমাল ডেলিভারি করাতো। কিন্তু এই আমরাই তাদের ঘৃণার চোখে দেখেছি, অপমান করেছি, ফলে সেই সুশীলীরা সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। সেই নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধে সেই সুশীলাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।’
রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস অডিটরিয়ামে সেভ দি চিলড্রেনের উদ্যোগে ‘স্টেকহোল্ডারস্ কনসালটেশন অন প্রিভেনশন অব আন নেসেসারি সিজারিয়ান সেকশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে এসব কথা বলছিলেন খ্যাতনামা গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মালিহা রশীদ।
সভায় গাইনি বিশেষজ্ঞ, এনজিও কর্মী, গবেষক ও মিডিয়াকর্মীসহ বিভিন্ন আলোচকরা অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধে কী করণীয় সে সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন। আলোচকরা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার অপচারের সুনির্দিষ্ট প্রটোকল তৈরি, জুনিয়র চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও ক্লিনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংখ্যক মিডওয়াইফ ও ডেলিভারি এসিস্ট্যান্ট নিয়োগের ওপর গুরত্বারোপ করেন।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার প্রাণরক্ষাকারী পদক্ষেপ হলেও দেশে অপ্রয়োজনীভাবে এর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যত গর্ভবর্তী নারী নবজাতক শিশু প্রসব করেন তার শতকরা ২৩ ভাগ সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ কর্তৃক বেঁধে দেয়া হারের প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে শতকরা ৩৮ ভাগ ও বেসরকারি পর্যায়ে শতকরা ৮০ ভাগ সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়, যা খুবই উদ্বেগজনক।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন বলেন, নরমাল ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একবার সিজারিয়ান হলেই পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারি হবে না এ তথ্য সঠিক নয়। একাধিকবার সিজারিয়ান হলেও নরমাল ডেলিভারি সম্ভব।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞ মিডওয়াইফ তৈরি হলে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে রোগীকে কাউন্সিলিং করা খুবই প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, কোনটি প্রয়োজনীয় ও কোনটি অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সিজারিয়ানকে শুধু নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা উচিত হবে না। কারণ প্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার কোনো কোনো গর্ভবতীর জীবন রক্ষা করবে। তারা তৃণমুল পর্যাযে এন্টিনেটাল চেকআপ বৃদ্ধির ওপর গুরত্বারোপ করেন।
বক্তারা জানান, দেশে ২২ হাজার মিডওয়াইফ প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র এক হাজার।
সেভ দি চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আইসিডিডিআরবির ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর শামস ইল আরেফিন, অধ্যাপক ফারহানা আলম প্রমুখ।
Related News
Comments
No comments found!
Leave a Comment
Your email address will not be published.